অধিবর্ষ (ইংরেজি: Leap year) হচ্ছে একটি বিশেষ
বছর, যাতে সাধারণ বছরের তুলনায় একটি দিন জোতির্বৈজ্ঞানিক
বছরের সাথে সামাঞ্জস্য রাখার জন্য বেশি থাকে।
জোতির্বৈজ্ঞানিক বছর বা পৃথিবী যে সময়ে সূর্যের চারপাশে
একবার ঘুরে আসে তার উপরই ঋতুর পরিবর্তন ও অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনাবলীর পুনরাবৃত্তি
নির্ভর করে। এর সময়কাল হচ্ছে প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড, অথচ প্রচলিত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিমতে বছর হিসাব করা হয় ৩৬৫ দিনে। এভাবে
প্রতিবছর প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় গোনার বাইরে থেকে যায় ও চার বছরে সেটা প্রায় এক
দিনের সমান হয়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য প্রতি চার বছর পরপর ৩৬৬ দিনে বছর
হিসাব করা হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৫
সালে
জুলিয়াস
সিজার
লিপ
ইয়ার
ধারণার
প্রবর্তন
করেন।
পূর্বে
রোমানদের
৩৫৫
দিনের
ক্যালেন্ডার
ছিল
এবং
বিভিন্ন
উৎসব
একই
ঋতুতে
রাখার
জন্য
একটি
২২
অথবা
২৩
দিনের
মাস
প্রতি
দ্বিতীয়
বছরে
যোগ
করা
হত।
সিজার
নিয়মটাকে
সহজ
করার
জন্য
বিভিন্ন
মাসে
দিন
যোগ
করে
৩৬৫
দিনের
বছর
সৃষ্টি
করলেন।
মূল
গণনা
করেন
সিজারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী
সোসিজেনেস।
প্রতি
৪
বছরে
ফেব্রুয়ারি
মাসে
২৮তম
দিনের
পর
একটি
দিন
যোগ
করার
নিয়ম
করা
হয়।
অর্থাৎ
প্রতি
চতুর্থ
বছরকে
লিপ
ইয়ার
করা
হয়।
১৫৮২
সালে
পোপ
অস্টম
গ্রেগরী
ক্যালেন্ডারটিকে
পরিমার্জন
করেন
এই
নিয়মে
যে
লিপ
ইয়ার
সে
বছরগুলোতে
আসবে
যে
সকল
বছর
৪
দ্বারা
সম্পূর্ণরূপে
বিভাজিত।
কিন্তু
যেহেতু
একটি
বছর
৩৬৫.২৫
দিনের
চেয়ে
একটু
কম ,
প্রতি
৪
বছরে
১
দিন
যোগ
করার
ফলে
৪০০
বছরে
প্রায়
৩টি
অতিরিক্ত
দিনের
সৃষ্টি
হয়।
তাই
৪টির
মধ্যে
কেবলমাত্র
একটি
শতাব্দী
বছর
লিপ
ইয়ার
হিসেবে
পরিগণিত
হয়।
এ
কারণে
১৭০০,১৮০০
ও
১৯০০
সাল
লিপ
ইয়ার
ছিল
না
এবং
২১০০
সাল
লিপ
ইয়ার
হবে
না।
কিন্তু
১৬০০
এবং
২০০০
লিপ
ইয়ার
ছিল
কারণ
ওই
বছরগুলো
৪০০
দ্বারা
সম্পূর্ণরূপে
বিভাজিত।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি :
এই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ৪ দিয়ে বিভাজ্য
বছরগুলোকে অধিবর্ষ বলা হয়। যেমন: ২০০৪ সাল একটি অধিবর্ষ। তবে এই নিয়মের
ব্যতিক্রমও আছে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে একদম নিখুঁতভাবে ৩৬৫.২৫ দিন
সময় নেয় না, একটু কম নেয়। তাই দেখা গেছে যে চার বছর পর পর অধিবর্ষ ধরলে প্রতি চারশ বছরে
৩ দিন সময় বেশি ধরা হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য যেসব বছর ১০০ দ্বারা
বিভাজ্য, কিন্তু ৪০০ দ্বারা নয় তাদের অধিবর্ষের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। যেমন: ৪
দ্বারা বিভাজ্য হওয়া সত্ত্বেও ১৯০০ সাল অধিবর্ষ নয়। কারণ এটি ১০০ দ্বারা বিভাজ্য
কিন্তু ৪০০ দ্বারা নয়।
বাংলা বর্ষপঞ্জি :
বাংলা বর্ষপঞ্জি, যা সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত হয়, তাতে অধিবর্ষের
ধারণা দেখা যায় না। পরবর্তিতে বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রস্তুত নতুন
বর্ষপঞ্জিমতে বাংলা বর্ষপঞ্জিতেও গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসরণে ফেব্রুয়ারি মাসের
সমসাময়িক বাংলা মাসে, সাধারণত ফাল্গুন মাসে, প্রতি চার বছর পর
পর একবার অতিরিক্ত একটি দিন গণনা করা হয়। তবে ভারতে ও বাংলাদেশের হিন্দুগণ
ধর্মীয় কারণে এই রীতি অনুসরণ করেন না। সনাতনী বাংলা বর্ষপঞ্জিতে অধিবর্ষ একটু
জটিল নিয়মে আসে। এক্ষেত্রে সাল থেকে ৭ বিয়োগ করে ৩৯ দিয়ে ভাগ করতে হয়। যদি
ভাগশেষ শূন্য বা চার দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয় তবে ঐ সালকে অধিবর্ষ ধরা হয়। আর
অধিবর্ষের অতিরিক্ত এক দিন চৈত্র মাসে যোগ হয়। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতি ৩৯ বছরে
১০টি অধিবর্ষ আসে, যেটা জোতির্বৈজ্ঞানিক বর্ষপঞ্জির সাথে যথেষ্ট সামাঞ্জস্যপূর্ণ। তবে অতি লম্বা
সময় ধরে এই নিয়ম অনুসরণ করে গেলে সম্ভবত সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।
..................................................................
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন