মানব জাতির ইতিহাসে এই দিনটি এক
শোকাবহ আর হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্ম দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভয়াবহ জঘন্য আর
নৃশংসতম সেই ঘটনায় মানব জাতি আজও কেপে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে মার্কিন বোমারু বিমান ২৯ বি থেকে
জাপানের হিরোশিমা শহরের
ওপর লিটল বয় নামের
নিউক্লীয় বোমা ফেলে যা পৃথিবীর
প্রথম পারমাণবিক বোমার শিকার । এই পারমাণবিক বোমার সর্বগ্রাসী তেজস্ক্রীয় আগুনে হিরোশিমা
শহরের অধিকাংশই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো মুহূর্তেই।
হিরোশিমার ওপরে ফেলা লিটল বয়-এর বিস্ফোরণে উদ্ভূত ব্যাঙের ছাতার
মেঘ
এখানেই
মার্কিনদের নৃশংসতা থেমে থাকে নি। এর তিন দিন পরেই আবার ৯ আগস্টে জাপানের
নাগাসাকি শহরেও ফেলা হয়েছিলো আরেকটি পারমাণবিক বোমা। যার নাম ছিলো দ্য ফ্যাট ম্যান।
নাগাসাকির ওপর ফেলা ফ্যাট ম্যান নামের নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণে উদ্ভূত
ব্যাঙের ছাতার মেঘ অধিকেন্দ্র থেকে ১৮ কি.মি. (১১ মাইল বা ৬০,০০০ ফুট) ওপরে উঠছে
অনুমান করা হয়
যে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যান। নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়
সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন। জাপানের
আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর
হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় ২৩৭,০০০
এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই
মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নিরপরাধ অসহায় অসংখ্য নারী, শিশু, বৃদ্ধ
থেকে সব বয়সী মানুষ।
শতাব্দীর পর
শতাব্দী ধরে মানুষের ভালোবাসায় তিলে তিলে গড়ে তোলা সমৃদ্ধ এই হিরোশিমা মাত্র একটি
পারমাণবিক বোমার আঘাতেই মানুষহীন, প্রাণহীন এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়।
বোমা নিক্ষেপকারী পাইলট টিবেটস্
বিমান থেকে শহরের ভয়াবহ ধ্বংসের দৃশ্য দেখে ভয়ে আতংকে উঠে।
জাপানের আত্মসমর্পণের পেছনে এই
বোমাবর্ষণের ভূমিকা এবং এর প্রতিক্রিয়া ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অধিকাংশের ধারণা এই বোমাবর্ষণের ফলে যুদ্ধ অনেক মাস আগেই
সমাপ্ত হয়, যার ফলে পূর্ব-পরিকল্পিত
জাপান আক্রমণ (Invasion) সংঘটিত হলে উভয় পক্ষের যে বিপুল
প্রাণহানি হত, তা আর বাস্তবে ঘটেনি। অন্যদিকে জাপানের সাধারণ
জনগণ মনে করে এই বোমাবর্ষণ অপ্রয়োজনীয় ছিল, কেননা জাপানের
বেসামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধ থামানোর জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছিল।
(সূত্র: জাল পেতে নেয়া)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন